ক্লাউড কম্পিউটিং কি?





ক্লাউড কম্পিউটিং কি?



ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

ক্লাউড কম্পিউটিং কি?


ক্লাউড কম্পিউটিং বলতে সার্ভার, স্টোরেজ, ডাটাবেস, সফ্টওয়্যার, অ্যানালিটিক্স এবং আরও অনেক কিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটিং পরিষেবা সরবরাহ করাকে বোঝায়।

ক্লাউড (Cloud) মানে হলো মেঘ। ইন্টারনেটের রূপক ধর্মী হিসেবে এটি ব্যবহৃত। কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেট নির্ভর কম্পিউটারের কাজসমূহ। ক্লাউড কম্পিউটিং বলতে একটি বিশেষ পরিসেবাকে বুঝায়। অর্থাৎ কোনো লোকাল সার্ভার বা লোকাল ডিস্ক ব্যবহার না করে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরবর্তী সার্ভার থেকে কম্পিউটিং পরিসেবা গ্রহণ করাই হলো ক্লাউড কম্পিউটিং।

এই পরিষেবাগুলি ক্লাউড কম্পিউটিং প্রদানকারীদের দ্বারা সরবরাহ করা হয় যারা ডেটা সেন্টারে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার অবকাঠামোর মালিক এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। ব্যবহারকারীরা চাহিদা অনুযায়ী এই পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে এবং  তারা যা ব্যবহার করে তার জন্য অর্থ প্রদান করতে পারে।

তাহলে,সহজভাবে বলা যায় – যখনই ইন্টারনেট ব্যবহার করা হবে, ক্লাউড কম্পিউটিং হবেই। এর মানে হলো এই যে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত ব্রাউজারে অনুরোধ করা সমস্ত তথ্য বিশ্বের বিভিন্ন অবস্থানে থাকা সার্ভারগুলিতে সংরক্ষিত থাকে। ক্লাউড কম্পিউটিংএ কোনো ভিডিও দেখা, খবর পড়া বা সঙ্গীত শুনা, যে কোনো কাজ করা হউকনা কেন, ক্লাউড থেকে তথ্যগুলি পাওয়া যাবে। কোন কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ থেকে নয়। এটিই হলো ক্লাউডের কম্পিউটিং সেবা।

ক্লাউড কম্পিউটিং কোনো বিশেষ সামগ্রী নয়। ক্লাউড কম্পিউটিং একটি বিশেষ পরিসেবা। এই উন্নত পরিসেবাটি কিছু কম্পিউটারকে গ্রিড সিস্টেম-এর মাধ্যমে সংযুক্ত রাখে।


ক্লাউডকম্পিউটিংসেবারবৈশিষ্ট্য


ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা দাতা ও সেবা গ্রহীতার মধ্যে যেসকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নরূপ –
১. রিসোর্স স্কেলেবিলিটি (Resource Scalability) : ক্লাউড সেবা গ্রহীতার চাহিদা কম বা বেশি যাই হউক না কেন , সে চাহিদা মেটানো হবে। অর্থাৎ ক্রেতা যেমন সেবা চাইবে , সেবা দাতা সেইভাবে সেবা দিতে পারবে।
২. অন-ডিমান্ড (On-demand ) : ক্রেতা চাহিদা গ্রহণে স্বাধীনতা থাকবে। অর্থাৎ যখন চাইবে তখনই সেবা দিতে পারবে। ক্রেতা তার ইচ্ছা অনুযায়ী যখন খুশি তার চাহিদা কমাতে বা বাড়াতে পারবে। এই বৈশিষ্ট্যটি হলো (on-demand self-service usage) প্রকৃতির।
৩. পে-অ্যাজ-ইউ-গো (Pay as you go) : এইক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতা পূর্ব থেকে কোনো সার্ভিস রিজার্ভ করতে হবে না। ঠিক যতটুকু সেবা গ্রহণ করবে ততটুকুর জন্য পেমেন্ট তাকে দিতে হবে।

ক্লাউড কম্পিউটিং কি?


ক্লাউড কম্পিউটিং এর সার্ভিসসমূহ


ক্লাউড কম্পিউটিং নিম্নরূপ সেবাসমূহ প্রদান করে থাকে। যথা-

১. অবকাঠামোগত সেবা (Infrastructure as service-IaaS) : এক্ষেত্রে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের নেটওয়ার্ক, স্টোরেজ, সিপিইউ ও অন্যান্য মৌলিক কম্পিউটিং রিসোর্স ভাড়া দেয়; ফলে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনীয় অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়ার চালাতে পারে। IaaS প্রদানকারীদের কিছু উদাহরণ হল Amazon Web Services (AWS), Microsoft Azure, এবং Google Cloud Platform।

২.   প্লাটফরম ভিত্তিক সেবা ( Platform as a service- PaaS) : এক্ষেত্রে ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় হার্ডওয়ার, অপারেটিং সিস্টেম, ওয়েব সার্ভার, ডেটাবেজ প্রোগ্রাম এক্সিকিউশন পরিবেশ ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে থাকে যাতে ব্যবহারকারী সহজেই অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপ করতে পারে ও তা চালাতে পারে। PaaS প্রদানকারীর কিছু উদাহরণ হল Heroku, Google App Engine, এবং Microsoft Azure।

৩. সফটওয়ার সেবা ( Software as a service-SaaS) : সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার ব্যবহারকারীগণ ভাড়ার বিনিময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চালাতে পারেন। SaaS অ্যাপ্লিকেশনের কিছু উদাহরণ হল Google Workspace, Salesforce, এবং Dropbox।

৪.   নেটওয়ার্ক সেবা (Network as a service-NaaS) : এই সেবাটি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীকে আন্তঃক্লাউড নেটওয়ার্ক বা ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি সুবিধা প্রদান করে। এটি ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ও কম্পিউটার রিসোর্স অনুযায়ী ব্যবহারকারীকে রিসোর্স ব্যবহারের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করে। যেমন ব্যান্ড উইডথ, ভিপিএন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ভার্চুয়ালাইজেশন ইত্যাদি।

৫.      ক্লাউড ক্লায়েন্ট সেবা (Cloud client services) : নেটওয়ার্ক ক্লায়েন্ট ডিভাইস এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীগণ ক্লাউড কম্পিউটিং এ প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। আবার বিভিন্ন ধরনের ব্রাউজার ব্যবহার করে ক্লাউডে কাজ করা যায়। যেমন ফায়ারফক্স, গুগুলক্রোম।


ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা


 ক্লাউড ব্যবহার করে নানা রকমের অনলাইন সার্ভিসে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন

১.   অপারেটিং খরচ কমানো : ক্লাউড ব্যবহার করে অপারেটিং খরচ (ঙঢ়বৎধঃরহম) যথেষ্ট পরিমাণ কমানো সম্ভব।

২.   প্রায় সীমাহীন স্টোরেজ সুবিধা : ক্লাউডে স্টোরেজ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। যখন যত দরকার সুলভ মূল্যে তখন তত স্টোরেজ সুবিধা পাওয়া যাবে। এখানে প্রায় সীমাহীন স্টোরেজ সুবিধা রয়েছে।

৩.   স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফ্টওয়্যার আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণ : ক্লাউডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফ্টওয়্যার আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকে বিধায় সার্ভিস গ্রহণকারী গ্রাহকের এসব বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না।

৪.   সহজে তথ্য প্রবেশাধিকার : ক্লাউড রেজিস্ট্রিকৃত গ্রাহকরা তার ডেটাবেস ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো অবস্থান থেকে, যেকোনো সময় ডেটা একসিস করতে পারে।

৫. সফ্টওয়্যার খরচ কম : ক্লাউড কমপিউটিং এর গ্রাহক সফ্টওয়্যার সার্ভিসসহ সার্ভিস নিলে প্রয়োজন অনুযায়ী সফ্টওয়্যারও সুলভে ব্যবহার করতে পারবে।

৬.  সহজপ্রাপ্যতা : ক্লাউড কমপিউটিং এর গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিস নিতে পারে। শুরুতে একটি সার্ভার ভাড়া নিয়ে প্রয়োজনে যেকোনো সময় একশটি সার্ভারও ভাড়া নিতে পারবে। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বিল দিতে হবে। কম ব্যবহার কররে কম বিল দিতে হবে।

৭.   নিরাপত্তা : ক্লাউড কমপিউটিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি দক্ষতা, ব্যাকআপ ক্যাপাসিটি অনেক বেশি। তাই কোনো ছোট প্রতিষ্ঠানের স্থাপিত নিজস্ব সেটআপের চেয়ে সেগুলো বেশি নিরাপদ।

৮.   ছোট ও প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ : একটি ছোট বা মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েক লাখ টাকা দিয়ে একটি সার্ভার কেনা, তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভালো বেতন দক্ষ লোক রাখা, সফ্টওয়্যার কেনা কঠিন। ক্লাউড কমপিউটিং এ খরচ ও ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে এনে সে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

৯.    বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী/ গবেষকদের সুবিধা : অনেকসময় বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য সাময়িকভাবে বিশাল কমপিউটিং সুবিধা প্রয়োজন হয় যা প্রতিষ্ঠা করা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে ক্লাউড সুবিধা নিয়ে কাজ করতে পারে।


ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের অসুবিধা


১.    সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বিধায় তথ্যের নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে কম

২.    নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্ধারিত ফি দিতে হয়

৩.   প্রোগ্রাম বা এপ্লিকেশনের উপর ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণ কম বা থাকে না

৪.    সাধারণত কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়















ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

Related :

রাউটার কি এবং রাউটার কিভাবে কাজ করে ?

হাব কি ? হাব কিভাবে কাজ করে ? প্রকারভেদ