কো-এক্সিয়াল ক্যাবল | প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা




কো-এক্সিয়াল ক্যাবল

কো-এক্সিয়াল ক্যাবল

কো-এক্সিয়াল Co-axial Cable কে সংক্ষেপে Coax বলা হয়ে থাকে।




কো-এক্সিয়াল ক্যাবল কি?

What is Co-axial Cable?


কো-এক্সিয়াল ক্যাবল হলো এমন এক ধরনের ক্যাবল যাতে গোলাকার আকৃতির ১টি পরিবাহী কঠিন পদার্থের তারকে অক্ষ ধরে তার চারপাশে ১টি অপরিবাহী বা অন্তরক (Insulator)  থাকে। অন্তরককে বেষ্টন করে অপর একটি তারজালির পরিবাহী বাইরের দিকে অন্তরক জেকেট দ্বারা আবৃত থাকে। অর্থাৎ দুটি পরিবাহী, ১টি অপরিবাহী বা অন্তরক (Insulator) এবং ১টি জ্যাকেট দ্বারা এই ক্যাবল গঠিত।

২টি পরিবাহী এর মধ্যে একটিকে ভেতরের পরিবাহী (Inner conductor)  এবং অপরটিকে বাইরের পরিবাহী (Outer conductor) বলা হয়।

ভেতরের পরিবাহীটি সাধারণত কপার (Cupper)  দিয়ে তৈরি। ভেতরের পরিবাহী এর বাইরে চারপাশে নমনীয় অপরিবাহী (Flexible insulation)  পদার্থ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।

এ অপরিবাহীর বাইরে চারিপাশে বাইরের পরিবাহী (Outer conductor) থাকে, যা ধাতব পাত বা ধাতব সুতা (Metal foil or thread) কিংবা দুয়ের সংমিশ্রণে তৈরি।

বাইরের পরিবাহী সিলিন্ডারের আকৃতিবিশিষ্ট। Outer conductor এর বাইরে পুরো তারকে ঢেকে দেয়ার জন্য Plastic cover থাকে, যাকে ক্যাবল জেকেট (Cable Jacket) বলা হয়।


কো-এক্সিয়াল ক্যাবল

Co-axial Cable কে সংক্ষেপে Coax বলা হয়ে থাকে। Oliver Heaviside নামক একজন প্রকৌশলী ও গনিত বিশারদ ১৯৮০ সালে কো-এক্সিয়াল ক্যাবল অবিষ্কার করেন।

এই ক্যাবল ব্যবহার করে এক কিলোমিটার পর্যন্ত দুরত্বে ডিজিটাল ডেটা প্রেরণ করা যায়।

অসুবিধার দিকটি হলো এর ডেটা ট্রান্সমিশন রেট তারের দৈর্ঘ্যরে উপর নির্ভর করে।

তারের দৈর্ঘ্য বেশি হলে ট্রান্সমিশন রেট কমে যায়। সাধারণ কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে এক কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে ডিজিটাল ডেটা প্রেরণ করা যায়, এক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সফার রেট ২০০ Mbps (Megabits per second) পর্যন্ত হতে পারে এবং ট্রান্সমিশন লস্ অপেক্ষাকৃত কম হয়। টেলিভিশনের ডিশ লাইন সংযোগের ক্ষেত্রে এই তার ব্যবহার করা হয়।



কো-এক্সিয়াল ক্যাবল এর প্রকারভেদ

নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কো-এক্সিয়াল ক্যাবলকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়।

যথা : – ১. থিননেট (Thinnet) , ২. থিকনেট (Thicknet)।

১. থিননেট (Thinnet) : এই ধরনের কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলের ব্যাস ০.২৫ ইঞ্চি। এটির ব্যান্ডউইডথ ১০ মেগাবিট/ সেকেন্ড হয়ে থাকে এবং এই ক্যাবেল সর্বোচ্চ ১৮৫ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত সমর্থন করে। প্রতি সেগমেন্টে ইহা সর্বোচ্চ ৩০ টি ডিভাইসকে সাপোর্ট করে। এই প্রযুক্তি সাধারণত 10  Base2  ইথারনেট নামে পরিচিত। এখানে ১০ হলো এর ব্যান্ডউইডথ (10Mbps)  এবং ২ হলো ক্যাবল দৈর্ঘ্য (২০০ মিটার)।



২. থিকনেট (Thicknet): এই কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলের ব্যাস ০.৫ ইঞ্চি। এর ব্যান্ডউইডথ ১০ মেগাবিট/ সেকেন্ড এর উপরে। এই ক্যাবল কোনো প্রকার রিপিটার ছাড়া ৫০০ মিটার দুরুত্ব পর্যন্ত সমর্থন করে। প্রতিসেকেন্ডে এটি ১০০ টির উপরে ডিভাইস সাপোর্ট করে। এই প্রযুক্তি সাধারণত 10 Base5 ইথারনেট নামে পরিচিত। এখানে ১০ হলো এর ব্যান্ডউইডথ (১০Mbps) এবং ৫ হলো ক্যাবল দৈর্ঘ্য (৫০০ মিটার)।



কো-এক্সিয়াল ক্যাবল-এর বৈশিষ্ট্য

১. কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলের ডেটা পরিবহন ক্ষমতা হলো ১০ এমবিপিএস।

২. এই ক্যাবল টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের চেয়ে হাই ফ্রিকুয়েন্সি সিগনাল বহন করে।

৩. কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলেরএটেনুয়েশন কম। ফাইবার অপটিক এর তুলনায় এই ক্যাবলের দাম কম।

৪. এই ক্যাবল সহজে ইনস্টল করা যায়।


কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের সুবিধাসমূহ

১. অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।

২. এটি ফাইবার অপটিক ক্যাবল অপেক্ষা কম ব্যয়বহুল এবং সহজে বহনযোগ্য।

৩. এর বাইরের দিকে বিদ্যুৎ-কুপরিবাহী আবরণের টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা এ ক্যাবলের মাধ্যমে অধিক দূরত্বে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ডেটা প্রেরণ সম্ভব।


কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের অসুবিধাসমূহ

১. এই ক্যাবল টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।

২. এই ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা বেশি কঠিন।


কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের ব্যবহার

১. ক্যাবল TV নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নে কো-এক্সিয়াল ক্যাবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. কম্পিউটারের মনিটরে আউটপুট পাঠানোর জন্য কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করা হয়।

৩. টেলিফোন সিষ্টেমে দ্রুতগতি সম্পন্ন চ্যানেল হিসাবে এর ব্যবহার রয়েছে।

৪. ল্যাবরেটরিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরিতেও কো-এক্সিয়াল ক্যাবল এর ব্যবহার করা হয়।
















Related Term :

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল কি?

ফাইবার অপটিক ক্যাবল