ফাইবার অপটিক ক্যাবল কি?-বৈশিষ্ট্য – গঠন – প্রকারভেদ – সুবিধা সমূহ
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কি?-বৈশিষ্ট্য – গঠন – প্রকারভেদ – সুবিধা সমূহ বর্ণনা করা হলো।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কি?
ফাইবার অপটিক ক্যাবল হলো এক ধরনের কাঁচের তন্তু দ্বারা তৈরি স্বচ্ছ তার যার মধ্যে দিয়ে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ করা হয়। এই কেবলে ব্যবহৃত কাচের তন্তু চুলের থেকেও কয়েকগুন সরু হয়ে থাকে। ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে আলোর গতিতে প্রবাহিত লেজার রশ্মির সাহায্যে ডেটা স্থানান্তর করা হয়।
আবিষ্কারের ইতিহাস
যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে অপটিকেল প্রযুক্তি ব্যবহারের ধারণা প্রথম আবিষ্কার করেন ১৭৯০ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী Claude Chappe । ইলেক্ট্রিকেল প্রযুক্তি আবিষ্কারের কারণে এই ধারণা বাস্তব রূপ নিতে পারেনি। ফাইবারে আলোর পূর্ণঅভ্যন্তরীণ প্রতিফলন আবিষ্কার করেন ১৮৪০ সালে সুইস পদার্থবিদ Daniel Collodon পরবর্তীতে আমেরিকান পদার্থবিদ Brian O’Brien সর্বপ্রথম অপটিকেল ফাইবার ব্যবহারে সমর্থ হন।
Charles Kuen Kao হলেন চিনা বংশোদ্বুত মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী এবং এবং পদার্থ বিজ্ঞানী যিনি ফাইবার অপটিক্্র এর উন্নয়নের পথিকৃত। তাঁকে ফাদার অব ফাইবার অপটিক্্র উপাধীতে ভ‚ষিত করা হয়। ২০০৯ সালে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরুষ্কারে ভ‚ষিত হন।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কিভাবে কাজ করে ঃ
অপটিক্যাল ফাইবার ইলেক্ট্রিকেল সিগনাল পরিবহন করতে পারে না। তাই ইলেক্ট্রিকেল সিগনালগুলোকে অবশ্যই লাইট সিগনালে এ রূপান্তর করতে হয়। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 3.00 × 108 মি/সে। ক্যাবলের শুরুতে একটি Electrical to light energy converter এবং ক্যাবলের শেষপ্রান্তে একটি light to Electrical energy converter ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে LED অথবা Laser Diodes ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সিগনালকে আলোক তরঙ্গে রূপান্তর করা হয়। গন্তব্যে একই ধরনের বিশেষ সার্কিট ব্যবহার করে আলোক তরঙ্গ থেকে বৈদ্যুতিক সিগনালে ডেটা পুনরুদ্ধার করা হয়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কি?-বৈশিষ্ট্য – গঠন – প্রকারভেদ – সুবিধা সমূহ
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের গঠন ও উপাদান :
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কি?-বৈশিষ্ট্য – গঠন – প্রকারভেদ – সুবিধা সমূহ
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের প্রধান উপাদান হলো গ্লাস বা কাঁচ যা বোরন সিলিকেট বা সোডিয়াম বোরো সিলিকেট বা সোডালাইম কাঁচকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সুবিধা হলো এই যে, এতে EMI (Electromagnetic Interference) প্রভাব নেই। কাঁচের ভেতর ডেটা আলোক সংকেতের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার তিনটি স্তরে গঠিত। যথা –
১. কোর, ২. ক্ল্যাডিং এবং ৩. জ্যাকেট
১. কোর : তারের ভিতরে যে সরু কাচ (Glass) থাকে, তাকে কোর (Core) বলা হয়। কোরের ব্যাস ৮ থেকে ১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। কোরের Glass–কে সিলিকন ডাই-অক্সাইড (Silica) এবং অন্যান্য উপাদান এর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। সাধারণত সকল ধরনের লাইটিং সিগনাল কোরের মধ্যদিয়েই প্রবাহিত হয়।
২. ক্ল্যাডিং : কোরকে আবদ্ধ করে কোরের বাইরের চারপাশে ধাতব যে স্তর থাকে, তাকে ক্ল্যাডিং (Cladding) বলা হয়।
৩. জ্যাকেট : ক্ল্যাডিং (Cladding) এর উপর যে পাতলা আবরণ (Coating) থাকে যা প্লাস্টিক (Plastic) দিয়ে তৈরি, তাকে জ্য্যাকেট বলা হয়।
বাহ্যিক পরিবেশে অপটিকেল ফাইবারকে সুরক্ষিত রাখতে অপটিকেল ফাইবারকে ঘিরে আরও কয়েকটি স্তর থাকে। সেগুলো হলো –
- Outer jacket;
- Strength members;
- Buffer;
- Optical fiber
অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকারভেদ
ফাইবারের গাঠনিক উপাদানের প্রতিসরাঙ্কের উপর নির্ভর করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
১. স্টেপ-ইনডেক্স ফাইবার (Step-index Fiber)
২. গ্রেডেড-ইনডেক্স ফাইবার (Graded-index Fiber)
১. স্টেপ-ইনডেক্স ফাইবার (Step-index Fiber) : স্টেপ-ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতিসরাঙ্ক সর্বত্র সমান থাকে এবং ব্যাস বেশি।
২. গ্রেডেড-ইনডেক্স ফাইবার (Graded-index Fiber) : গ্রেডেড-ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতিসরাঙ্ক কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি এবং ব্যাসার্ধ বরাবর কমতে থাকে।
কোরের ব্যাস অনুযায়ী ফাইবারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. সিঙ্গেল মোড ফাইবার (Single Mode Fiber)
২. মাল্টি মোড ফাইবার (Multi Mode Fiber)
১. সিঙ্গেল মোড ফাইবার (Single Mode Fiber) : সিঙ্গেল মোড ফাইবারের সাথে ক্যাবল একটি আলোক সংকেত প্রেরণের পথ থাকে এবং সাধারণ লেজার সিগন্যালিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। সিঙ্গেল মোড ফাইবারের কোরের ব্যাস সাধারণত ৮ থেকে ১২৫ মাইক্রোন হয়ে থাকে। কোনো রিপিটার ছাড়াই সিঙ্গেল মোড ফাইবার ক্যাবলকে ৩ মাইল পর্যন্ত ডেটা নিয়ে যাওয়া যায়।
২. মাল্টি মোড ফাইবার (Multi Mode Fiber) : মাল্টিমোড ফাইবারের কোরের ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটারের (10 mm) এর বেশি হয়ে থাকে। স্টেপ-ইনডেক্স মাল্টিমোড ফাইবারের কোরের মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মি পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। আলোক রশ্মি কোর ও ক্ল্যাডিং এর বিভেদ তলে সংকট কোণের চেয়ে বেশি কোণে আপতিত হয় এবং সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়। এর চেয়ে কম কোণে আপতিত হলে আলোক বেশি দূরে প্রবাহিত হতে পারে না, যার ফলশ্র“তিতে তথ্য বেশি দূর পাঠানো সম্ভব হয় না।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বৈশিষ্ট্য
১. ফাইবার অপটিক ক্যাবলের দাম ইউটিপি, এসটিপি ও কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের চেয়ে বেশ বেশি।
২. ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইনস্টল করা কঠিন।
৩. ফাইবার অপটিক ক্যাবলের প্রধান সুবিধা হলো এতে উচ্চগতি (২ গিগাবিট/ সে) পাওয়া যায়।
৪. ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের মতোই ফাইবার অপটিক ক্যাবলে নোডের সংখ্যা নির্ভর করে হাবের পোর্টের সংখ্যার উপর।
৫. ইলেকট্রিসিটির মতো আলোক সংকেত বাইরে ছড়িয়ে পড়ে না বলে এতে এটেনুয়েশন নেই বললেই চলে।
৬. ফাইবার অপটিক ক্যাবলে EMI ( Electro Magnetic Interference) নেই বলে এটি এমন সব স্থানে ব্যবহার করা যায় যেখানে অনেক ইলেকট্রিক্যাল ইন্টারফের্যান্স থাকে।
৭. এটি গ্লাস ফাইবারের আকৃতি, যা মানুষের চুলের সমতুল্য।
৮. অপটিক্যাল ফাইবার Internal Reflection এর মাধ্যমে Light Beam (আলোক বিম) আকারে সিগন্যাল Encode -কে Transmit করে।
৯. এর ফ্রিকুয়েন্সি রেঞ্জ হলো ১৮৬ থেকে ৩৭০ THz.
১০. এ ক্যাবলের টিপিক্যাল এটেনুয়েশন নেই।
১১. এটি রিপিটার ছাড়াই ৫০ কি.মি. পর্যন্ত ডেটা পাঠানো যায়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল-এর সুবিধাসমূহ
১. ডেটা স্থানান্তরের গতি অনেক বেশি (আলোর গতিতে)।
২. উচ্চ ব্যান্ডউইথ।
৩. আকারে ছোট ও ওজন অত্যন্ত কম।
৪. শক্তির ক্ষয় তুলনামূলক কম।
৫. বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত।
৬. ডেটা সংরক্ষণে গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
৭. ডেটা আদান-প্রদানে পরিবেশের তাপ, চাপ ইত্যাদি কোনো বাধা প্রদান করতে পারে না।
৮. নির্ভুলভাবে ডেটা স্থানান্তর করা যায়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল এর অসুবিধাসমূহ
১. ফাইবার অপটিক ক্যাবলে অত্যন্ত দামি।
২. ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইনস্টল করা ঝামেলাপূর্ণ।
৩. ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে ট আকারে বাঁকানো যায় না।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কি?-বৈশিষ্ট্য – গঠন – প্রকারভেদ – সুবিধা সমূহ
Related Term :