ল্যান কি ? শ্রেনীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য
ল্যান (LAN) বলতে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network) বোঝায়।
কোনো সীমাবদ্ধ ভৌগোলিক এলাকার অনেকগুলো কম্পিউটার, টার্মিনাল বা অন্যান্য পেরিফেরাল ডিভাইসসমূহে পরস্পর আন্তঃসংযোগ এর মাধ্যমে গঠিত নেটওয়ার্ককে ল্যান বলে।
সীমাবদ্ধ ভৌগোলিক এলাকা বলতে সাধারনত ১ কি.মি বা তার কম এরিয়া বুঝানো হয়। একই ভবন বা পাশাপাশি অবস্থিত ভবন বা একই ক্যাম্পাসে স্থাপিত কম্পিউটারসমূহের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও একে অপরের বিভিন্ন রিসোর্স, যেমন ফাইল, প্রিন্টার, এবং ইন্টারনেট সংযোগ, শেয়ার করতে ল্যান (LAN) স্থাপন করা হয়।
সাধারণত কোনো স্কুল, বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হাসপাতাল, বিপনি বিতান, অফিস বিল্ডিং, গবেষণাগার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে এটি গড়ে ওঠে।
১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রথম বাণিজ্যিক ল্যান প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটে এবং ১৯৮৩ সালের পরের সময়গুলোকে ল্যানের যুগ বলে অভিহিত করা হয়।
ল্যান কি ? শ্রেনীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য
4টি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার এবং একটি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে একটি LAN (Local Area Network) তৈরি |
ল্যানের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- সীমিত ভূগোলিক এলাকা: ল্যান সাধারণত একটি ছোট এবং নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এর বিস্তৃতির দৈর্ঘ্য সাধারণত কয়েক মিটার থেকে কয়েক শত মিটার (1 km এর কম ) পর্যন্ত হতে পারে।
- উচ্চ ডেটা ট্রান্সফার রেট: ল্যান উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফার সক্ষম করে, যা সাধারণত ১০০ Mbps থেকে ১০ Gbps পর্যন্ত হতে পারে।
- নিম্ন ল্যাটেন্সি: ল্যানের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারের সময়কাল খুবই কম থাকে, যা কম ল্যাটেন্সি সরবরাহ করে। (ল্যাটেন্সি (Latency) হল একটি মাপকাঠি যা নির্ধারণ করে কত দ্রুত একটি ডেটা প্যাকেট একটি উৎস থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় নেয়।)
- নিরাপত্তা: ল্যানের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান অধিক নিরাপদ হয় কারণ এটি একটি সীমাবদ্ধ নেটওয়ার্কের মধ্যে হয়।
LAN (Local Area Network) এর শ্রেণীবিভাগ :
নেটওয়ার্ক টোপোলজি অনুযায়ী:
A) বাস টোপোলজি:
- সমস্ত ডিভাইস একটি একক কেন্দ্রীয় কেবলের সাথে সংযুক্ত থাকে।
- সহজ ও সাশ্রয়ী, তবে কেবল বা ডিভাইসে সমস্যা হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়।
B) রিং টোপোলজি:
- প্রতিটি ডিভাইস দুটি প্রতিবেশী ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এটি একটি রিং গঠন করে।
- ডেটা একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে চলে, তবে একটি ডিভাইসে সমস্যা হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক প্রভাবিত হয়।
- প্রতিটি ডিভাইস একটি কেন্দ্রীয় হাব বা সুইচের সাথে সংযুক্ত থাকে।
- একটি ডিভাইসে সমস্যা হলে নেটওয়ার্ক প্রভাবিত হয় না, তবে হাবে সমস্যা হলে পুরো নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়।
D) মেশ টোপোলজি:
- প্রতিটি ডিভাইস একাধিক ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে।
- অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, তবে ইনস্টল এবং মেইনটেইন করতে ব্যয়বহুল।
E) হাইব্রিড টোপোলজি:
- বিভিন্ন টোপোলজির মিশ্রণ।
- উদাহরণ: স্টার-বাস টোপোলজি।
নেটওয়ার্ক মিডিয়া অনুযায়ী:
তারযুক্ত ল্যান (Wired) : তারযুক্ত LAN-প্রযুক্তি উপাত্ত বা তথ্য স্থানান্তরের জন্য মিডিয়া হিসেবে কো-এক্সিয়াল ক্যাবল, জোড় পাকানো তার ( Twisted Pair Cable), অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও বিশেষ ধরনের ইন্টারফেস কার্ড ব্যবহৃত হয়। তারযুক্ত ল্যানে সুইচ লিংক তৈরিতে অপটিকেল ফাইবার সাধারণত ব্যবহার হয়।
তারবিহীন ল্যান (Wireless) : তারবিহীন LAN-প্রযুক্তি উপাত্ত বা তথ্য স্থানান্তরের জন্য ওয়াইফাই (Wifi) সিগনাল ব্যবহার করে থাকে। সহজ ইনস্টলেশনের কারণে তারবিহীন ল্যান প্রযুক্তি (WLAN) বিভিন্ন অফিস, বাসভবনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইথারনেট (Ethernet) হলো লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের উদাহরণ।
LAN ব্যবহারের উদ্দেশ্যসমূহ (Purpose of the LAN) :
LAN মূলত নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় :
১. রিসোর্স শেয়ারিং : LAN -এর কম্পিউটার বা টার্মিনালসমূহ প্রিন্টার, ম্যাগনেটিক ডিস্ক ইত্যাদি রিসোর্সসমূহ শেয়ার করতে পারে।
২. ইনফরমেশন শেয়ারিং : বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগাম, ডেটা ইত্যাদি নেটওয়ার্কে কম্পিউটার বা টার্মিনালসমূহ শেয়ার করতে পারে।
৩. নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস (Network Access) : LAN এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী WAN এ অ্যাক্সেস করতে পারে।
ল্যান (LAN) কীভাবে তৈরি করবেন :
ল্যান (LAN) তৈরি করতে হলে আপনাকে কিছু হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার উপাদান প্রয়োজন হবে। নিচে একটি সাধারণ গাইডলাইন দেওয়া হল ল্যান সেটআপ করার জন্য:
উপকরণ প্রয়োজন:
- রাউটার: ইন্টারনেট সংযোগের জন্য এবং নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলি সংযুক্ত করার জন্য।
- সুইচ: যদি একাধিক ডিভাইস যুক্ত করতে হয়।
- ইথারনেট কেবল: ডিভাইসগুলিকে রাউটার বা সুইচের সাথে সংযুক্ত করতে।
- নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার: কম্পিউটারের জন্য (যদি বিল্ট-ইন না থাকে)।
- কম্পিউটার বা ডিভাইস: নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার জন্য।
ধাপ ১: রাউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ
- রাউটার সেটআপ করুন: রাউটারকে ইন্টারনেট মডেমের সাথে সংযুক্ত করুন (যদি ইন্টারনেট সংযোগ চান)।
- রাউটার কনফিগার করুন: রাউটারের ডিফল্ট আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে একটি ওয়েব ব্রাউজারে রাউটারের কনফিগারেশন পেজে লগ ইন করুন এবং প্রয়োজনীয় সেটিংস কনফিগার করুন, যেমন ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড ইত্যাদি।
ধাপ ২: সুইচ এবং ডিভাইস সংযোগ
- সুইচ সেটআপ করুন: যদি একাধিক ডিভাইস সংযোগ করতে হয়, তাহলে রাউটারকে সুইচের সাথে সংযুক্ত করুন।
- ডিভাইস সংযোগ করুন: প্রতিটি কম্পিউটার বা ডিভাইসকে ইথারনেট কেবলের মাধ্যমে রাউটার বা সুইচের সাথে সংযুক্ত করুন।
ধাপ ৩: নেটওয়ার্ক কনফিগারেশন
- আইপি অ্যাড্রেস কনফিগার করুন: সাধারণত, রাউটার DHCP ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিটি ডিভাইসকে একটি আইপি অ্যাড্রেস প্রদান করে। তবে আপনি চাইলে ম্যানুয়ালি আইপি অ্যাড্রেস কনফিগার করতে পারেন।
- শেয়ারিং সেটআপ করুন: প্রতিটি ডিভাইসে ফাইল ও প্রিন্টার শেয়ারিং সেটআপ করুন। উইন্ডোজের ক্ষেত্রে, “Network and Sharing Center” এ গিয়ে শেয়ারিং অপশনগুলো কনফিগার করুন।
- ফায়ারওয়াল এবং নিরাপত্তা সেটিংস: নেটওয়ার্ক নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত ফায়ারওয়াল এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কনফিগার করুন।
ধাপ ৪: নেটওয়ার্ক পরীক্ষা
- সংযোগ পরীক্ষা করুন: প্রতিটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে পিং করে নেটওয়ার্ক সংযোগ পরীক্ষা করুন।
- শেয়ার করা রিসোর্স অ্যাক্সেস করুন: নিশ্চিত করুন যে শেয়ার করা ফাইল, প্রিন্টার ইত্যাদি অন্যান্য ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করা যাচ্ছে।
ধাপ ৫: অতিরিক্ত কনফিগারেশন (যদি প্রয়োজন হয়)
- ভ্ল্যান (VLAN = (Virtual Local Area Network)সেটআপ: যদি নিরাপত্তার জন্য বা অন্যান্য কারণে পৃথক লজিক্যাল নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হয়, তাহলে সুইচ এবং রাউটারে ভ্ল্যান কনফিগার করুন।
- নেটওয়ার্ক মনিটরিং: নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক মনিটর করতে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য নেটওয়ার্ক মনিটরিং টুল ব্যবহার করুন।
এই ধাপগুলি অনুসরণ করে আপনি সহজেই একটি ল্যান (LAN) তৈরি করতে পারবেন এবং সেটিকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
ল্যান কি ? শ্রেনীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য
Related :