ডেটাবেজ কি
ডেটাবেজ কি ?
What is database?
শব্দগত অর্থে ডেটাবেজ মানে উপাত্ত সমাবেশ যেখানে ডেটা (Data) শব্দের অর্থ হচ্ছে উপাত্ত এবং বেজ (Base) শব্দের অর্থ হচ্ছে ঘাঁটি বা সমাবেশ। অতএব ডেটাবেজ শব্দের অর্থ উপাত্ত ঘাঁটি বা উপাত্ত সমাবেশ।
বিভিন্ন লেখক ডেটাবেজকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে তাদের কয়েকজনের সংজ্ঞা উলেখ করা হলো-
Wikipedia অনুসারে “A database is an organized collection of data.”
গঠনমূলক অর্থে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এক বা একাধিক ডেটা টেবিল বা ফাইলের সমষ্টিকে ডেটাবেজ বলে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে ডেটাবেজ। এই ডেটাবেজে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ডেটা, টিউশন ফি হিসাবের ডেটা এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত ডেটা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেকগুলো ডেটাবেজকে একত্রে ডেটা ব্যাংক বলা হয়। উদাহরণÑ কলেজ ডেটাবেজে শিক্ষার্থীদের St_Personal table, St_Reuslt table, St_Tution fee, T_Personal table, T_Pay table প্রভৃতি থাকতে পারে।
ডেটাবেজের প্রকারভেদ
Classification of database
ডাটাবেস বিভিন্ন ধরনের আছে । একটি নির্দিষ্ট সংস্থার জন্য সর্বোত্তম ডাটাবেস নির্ভর করে সংস্থাটি কীভাবে ডেটা ব্যবহার করতে চায় তার উপর। নি¤েœ কয়েক রকমের ডেটাবেজ নিয়ে আলোচনা করা হলো যেগুলো সাধারন এবং প্রচলিত আছে।
Relational Database
পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক টেবিলের সাহায্যে গঠিত ডেটাবেজকে রিলেশনাল ডেটাবেজ বলে। এই রিলেশন কোনো একটি নির্দিষ্ট ফিল্ডের উপর ভিত্তি করে দুই বা ততোধিক টেবিলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে রিলেশন তৈরি করা টেবিলসমূহ থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা নিয়ে আলাদা ডেটা টেবিল তৈরি করা যায়। একটি রিলেশনাল ডাটাবেসের আইটেমগুলি কলাম এবং সারি সহ টেবিলের একটি সেট হিসাবে সংগঠিত হয়। রিলেশনাল ডাটাবেস 1980 এর দশকে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। রিলেশনাল ডাটাবেস প্রযুক্তি কাঠামোগত তথ্য অ্যাক্সেস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় প্রদান করে।
Object-oriented databases
একটি অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড ডাটাবেস (OOD) একটি ডাটাবেস সিস্টেম যা জটিল ডেটা অবজেক্ট নিয়ে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ, এতে অবজক্টে-ওরযি়ন্টেডে প্রোগ্রামিং এর মত ডাটাবেসের তথ্য অবজেক্ট আকারে উপস্থাপন করা হয়।
Corporate Database
বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, বিমা, বহুজাতিক কোম্পানি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নেটওয়ার্কিং দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ ও তা ব্যবহারের জন্য বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন যে ডেটাবেজ সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাকে কর্পোরেট ডেটাবেজ বলে। একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সকলে সংযুক্ত থাকেন। কর্পোরেট ডাটাবেস উদ্যোক্তা এবং ব্যবস্থাপকদের আরও ভাল সিদ্ধান্ত নিতে এবং বাজার সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলির উপর সঠিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়তা করে।
Distributed databases
ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেস হল একটি ডাটাবেস যা একই নেটওয়ার্কে বা সম্পূর্ণ ভিন্ন নেটওয়ার্কে বিভিন্ন সাইটে অবস্থিত দুই বা ততোধিক ফাইল নিয়ে গঠিত। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে, ডাটাবেসের অংশগুলি একাধিক অবস্থানে (কম্পিউটারে ) সংরক্ষণ করা যেতে পারে বা বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে।
Data warehouses
Data warehouse হল এক ধরনের ডাটাবেস যা বিশেষভাবে দ্রুত অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণের জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তার একটি মূল উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়।
Graph databases
গ্রাফ ডাটাবসে হলো এমন একটি ডেটাবেস যাতে ডেটা সংরক্ষিত হয় এনটিটি হিসাবে এবং এনটিটির মধ্যে সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ।
Open source databases
একটি ওপেন সোর্স ডাটাবেস সিস্টেম হল এমন যার সোর্স কোড ওপেন সোর্স। এই ধরনের ডাটাবেস SQL বা NoSQL ডাটাবেস হতে পারে।
Cloud database
ক্লাউড ডাটাবেস হল এমন একটি ডেটার সংগ্রহ, যাহা হয়তো কাঠামোগত অথবা অসংগঠিত এবং যা একটি ব্যক্তিগত, পাবলিক বা হাইব্রিড ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মে থাকে।
Multimodel database
মাল্টিমডেল ডাটাবেস এমন একটি ডেটার সংগ্রহ, যাহা বিভিন্ন ধরনের ডাটাবেস মডেলকে একক, ইন্টিগ্রেটেড ব্যাক এন্ডে একত্রিত করে। এর মানে তারা বিভিন্ন ধরনের ডেটা টাইপ সমন্বয় করতে পারে।
Self-driving database
এই ধরনের ডেটাবেস নতুন এবং সবচেয়ে যুগান্তকারী ধরনের ডাটাবেস (স্বায়ত্তশাসিত ডাটাবেস নামেও পরিচিত) । এটি ক্লাউড-ভিত্তিক এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ডাটাবেস টিউনিং, নিরাপত্তা, ব্যাকআপ, আপডেট এবং অন্যান্য রুটিন ম্যানেজমেন্ট কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের দ্বারা সঞ্চালিত করে ।
এগুলি বর্তমানে ব্যবহৃত কয়েক ডজন ধরণের ডেটাবেসের মধ্যে কয়েকটি মাত্র। অন্যান্য, কম সাধারণ ডেটাবেসগুলি খুব নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক, আর্থিক বা অন্যান্য ফাংশনের জন্য তৈরি করা হয়।
ডেটাবেজের বিভিন্ন উপাদান
Elements of database
ডেটাবেজের বিভিন্ন উপাদান সমূহ হলো – ১) ডেটা ২) ফিল্ড ৩) রেকর্ড ৪) টেবিল ইত্যাদি।
ডেটা ( Data ) : ডেটা টেবিল কাঠামোতে বিভিন্ন ফিল্ডের অধিনে যাহা কিছু ইনপুট করা হয় তাহাই ডেটা। অর্থাৎ ডেটাবেস টেবিলে প্রসেসিং কাজে তথ্যের যে ক্ষুদ্রাংশ ব্যবহৃত হয়, তাই ডেটা। যেমন – বর্ণ ,শব্দ, সংখ্যা, চিহ্ন, চিত্র, অবজেক্ট ইত্যাদি।
ফিল্ড (Field) : একই জাতীয় কতগুলো ডেটাকে একটি ক্যাটাগরিতে নামকরণ করলে তৈরি হয় ফিল্ড। ফিল্ড হলো ক্ষুদ্রতম ডেটা ইউনিট বা ডেটা টাইপ। এটি কোনো কিছুর বৈশিষ্ট্য বা Attribute নির্দিষ্ট করে। যেমন- রোল নং, নাম, ঠিকানা, মোবাইল নং ইত্যাদি এক একটি ফিল্ড বা কোনো শিক্ষার্থীর Attribute নির্দিষ্ট করে।
রেকর্ড (Record) : পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি ফিল্ড নিয়ে একটি রেকর্ড গঠিত হয়। যেমন- কোনো প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীর রোল নং, নাম, ঠিকানা, মোবাইল নং প্রভৃতি ফিল্ডের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে একটি রেকর্ড।
টেবিল (Table)/ ফাইল (File): পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি রেকর্ড নিয়ে একটি টেবিল/ ফাইল গঠিত হয়। যেমন- কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর রোল নং, নাম, ঠিকানা, মোবাইল নং প্রভৃতি নিয়ে গঠিত রেকর্ডসমূহ হচ্ছে একটি টেবিল বা ডেটা ফাইল। সাধারণত টেবিলের একটি নাম থাকে।
নিম্নে ফিল্ড, রেকর্ড ও টেবিলের নমুনা দেখানো হলো :
ডেটার এনটিটি এবং এট্রিবিউট :
এনটিট (Entity)
এনটিটি হচ্ছে সত্তা যা দিয়ে কোনো কিছু চিহ্নিত করা যায়। যেমন- ছাত্র। এনটিটির বাস্তব উপস্থিতি থাকতে পারে অথবা এটি শুধুমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে হতে পারে। কোন ডেটা টেবিলকে চিহ্নিত করার জন্য টেবিলের জন্য যে নাম নির্ধারিত হয় তাহাই ডেটার এনটিটি।
এনটিটি সেট (Entity set)
একই জাতীয় এনটিটির সমষ্টিকে এনটিটি সেট (Entity set) বলা হয়। একটি ডেটাবেজকে এনটিটি সেট বলা যেতে পারে।
এট্রিবিউট (Attribute)
এট্রিবিউট হচ্ছে এনটিটির উপাদান। একটি এনটিটি এর বৈশিষ্ট্য প্রকাশের যে সমস্ত ফিল্ড বা উপাদান ব্যবহার করা হয় তাকে এট্রিবিউট বলা হয়। যেমন ছাত্র এনটিটির এট্রিবিউটগুলো হলো নাম, রোল নং, ঠিকানা, ফোন নং ইত্যাদি।
ভেল্যু (Value) :
এট্রিবিউট এর একক মানগুলোকে বলা হয় ভেল্যু। নিম্নের টেবিলে ছাত্র এনটিটির এট্রিবিউটগুলোর ভ্যালু প্রকাশ করা হলো :
ডেটাবেজের ব্যবহার
Use of Database
আধুনিক তথ্য ও জ্ঞান ব্যবস্থাপনার প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ডেটাবেজের ব্যবহার দেখা যায়। নিম্নে ডেটাবেজ ব্যবহারের কিছু ক্ষেত্র উলেখ করা হলো। যথাÑ
১. তথ্য ব্যস্থাপনা : শিক্ষা ব্যুরো, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, পরিসংখ্যান ব্যুরো, নির্বাচন কমিশন, কৃষি উন্নয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, আপডেট ইত্যাদি কাজে।
২. উৎপাদন ব্যবস্থাপনা : বিভিন্ন উৎপাদন মজুদ, চাহিদা, অর্ডার প্রভৃতি হিসাব বিশ্লেষণে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণের কাজে।
৪. ব্যাংকিং : গ্রাহকের প্রোফাইল, ব্যালেন্স, একাউন্টের হিসাব বিবরণ, লোন, ক্রেডিট কার্ড প্রভৃতি কাজে।
৫. মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা : কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ফাইল, বেতন-ভাতাদি, ওভারটাইম, বোনাস প্রভৃতি হিসাব প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণে।
৬. টেলিকমিউনিকেশন : টেলিফোনের কলের রেকর্ড, মাসিক বিল, প্রি-পেইড, কলিং বিলের হিসাব, গ্রাহকের প্রোফাইল সংরক্ষণে।
৭. অর্থ ব্যবস্থাপনা : স্টক মার্কেটে বিভিন্ন অর্থলগ্নীকারক ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় (যেমন স্টক, শেয়ার, ক্রয়-বিক্রয়, আর্থিক বিশ্লেষণ) প্রভৃতি কাজে।
৮. বৈজ্ঞানিক গবেষণা : কৃষি গবেষণা, চিকিৎসা গবেষণা, মহাকাশ গবেষণা ইত্যাদি।
৯. নিরাপত্তা : পুলিশবাহিনী, সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন কাজে ডেটাবেজ ব্যবহার করা হয়।
ডেটাবেজ কি
Related Term
ডেটা টাইপ