তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি

উপাত্ত কি ?

 (What is Data?)

ল্যাটিন শব্দ Datum -থেকে Data (ডেটা) শব্দটির উৎপত্তি। Datum–(“something given.”) অর্থ হচ্ছে তথ্যের উপাদান (an item of information)। কালক্রমে Datum এর বহুবচন হলো Data  ।  ১৬৪০ সাল থেকে Data (ডেটা) শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কাঙ্খিত ফলাফল লাভের জন্য প্রসেসিং কাজে ব্যবহৃত তথ্যের কাঁচামালকে ডেটা বলে। অর্থাৎ প্রসেসিং কাজে তথ্যের যে ক্ষুদ্রাংশ ব্যবহৃত হয়, তাই ডেটা। যেমন – বর্ণ ,শব্দ, সংখ্যা, চিহ্ন, চিত্র, অবজেক্ট ইত্যাদি।

What is data?

তথ্য কি ?

(What is Information?)

একবিংশ শতাব্দীর সকল প্রকার চ্যালেঞ্জ উত্তরণের অন্যতম চাবিকাঠি হল তথ্য। দক্ষতার সাথে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ আজ বলা যায় উন্নতির চালিকা শক্তি। তাহলে জানা যাক তথ্য কি? তথ্য হলো ডেটা ও জ্ঞান এর সমন্বয়। তথ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ডেটা অর্থবহ ও কার্যকর হয়ে থাকে আর জ্ঞান হলো যাহা ভাবগত বোধগম্যতা সৃষ্টি করতে পারে। একজন ছাত্রের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর কিংবা একজন ব্যক্তির মোবাইল ফোন নম্বরটি একটি ডেটা। কিন্তু কয়েকজনের ফোন নম্বর সম্বলিত ফোনবুকটি কিংবা ছাত্রটির পরীক্ষার ফলাফল বিবরনী একটি তথ্য। অর্থাৎ ডেটাকে প্রক্রিয়াজাত করার পর যে অর্থবহ সুশৃংখল ফলাফল পাওয়া যায় তাকেই বলা হয় তথ্য বা ইনফরমেশন। যে সকল ডেটা সাজানো, প্রক্রিয়াজাত, সহজবোধ্য, অর্থবহ, কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য তাই তথ্য বা ইনফরমেশন। যেমন- Customer টেবিল থেকে কোন এক কাস্টমারের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে যে ফলাফল পাওয়া যাবে, তাই ইনফরমেশন।


প্রযুক্তি কি ?

(What is Technology)  

প্রযুক্তি (Technology)  শব্দটি গ্রিক শব্দ Techne (যার অর্থ শিল্প, কারু কিংবা হাতের দক্ষতা) এবং logia (যার অর্থ হলো শব্দ) এ দুয়ের সমন্বয়ে গঠিত। প্রযুক্তি বলতে বিভিন্ন কৌশল, দক্ষতা, পদ্বতী, প্রকৃয়া ইত্যাদির সমষ্টিকে বুঝায় যাহা পন্য ও সেবা প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর ব্যাবহারিক প্রয়োগ। ‘প্রযুক্তি’ শব্দটির ব্যবহার বহুমাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক জীবনযাত্রায় ইহা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে তৈরি এমন একটি মিশ্র পদ্বতি যার মাধ্যমে জীবনযাত্রা পূর্বের তুলনায় আরও সহজ হয়ে উঠে।


তথ্যপ্রযুক্তি  (আইটি)

(Information technology সংক্ষেপে IT)

তথ্য শব্দটির ইংরেজী পরিভাষা হলো  ‘ÔInformation’’। ইংরেজী ইনফরমেশন শব্দটি ল্যাটিন শব্দমূল ‘Informatio’’থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই শব্দটির ক্রিয়ামূল  যার অর্থ – কাউকে কোন কিছু অবগত করা, পথ দেখানো , শেখানো , আদান-প্রদান ইত্যাদি।

সুতরাং তথ্য আহরন, সংরক্ষণ, প্রকৃয়াকরন, তথ্য বিতরন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যাবলী পরিচালনার বিজ্ঞানসন্মত প্রকৃয়াকেই এক কথায় ’তথ্যপ্রযুক্তি’ বলা হয়। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নীতিমালা অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো- যে কোন প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রকৃয়াকরন, সঞ্চালন এবং বিচ্ছুরনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি।                                         

Claude Elwood Shannon (April 30, 1916 – February 24, 2001) কে তথ্যপ্রযুক্তির জনক বলা হয়। তিনি ছিলেন আমেরিকান গনিতবিদ, তড়িৎ প্রকৌশলী এবং ক্রিপটোগ্রাফার।     


যোগাযোগ প্রযু ক্তি  

(Communication Technology)

দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে তথ্য আদান-প্রদান করাই হলো কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ। কোনো ডেটাকে নির্ভরযোগ্যভাবে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে স্থানাšতর কিংবা একজনের ডেটা অন্য সবার নিকট বিতরন করার প্রক্রিয়াকে ডেটা কমিউনিকেশন বলা হয়। এইরূপ একস্থান থেকে অন্যস্থানে ডেটা বা উপাত্ত আদান প্রদানের জন্য অর্থাৎ, ডেটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি বলে। Professor Emeritus Claude E. Shannon কে তথ্যপ্রযুক্তির মত ডিজিটাল কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন থিউরিরও জনক বলা হয়। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত যোগাযোগ প্রযুক্তির মধ্যে রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, টেলিফোন , ফ্যাক্্র, কম্পিউটার,ইন্টারইেঁ,মোবাইল ফোন, তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারে ব্যবহৃত ই-মেইল, ফেইসবুক, স্কাইপি, টুইটার , ইমো ইত্যাদি ব্যবস্থা যোগাযোগ প্রকৃয়াকে করেছে আরোও সমৃদ্ধ।

Communication technology
Communication technology

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি  বা  আইসিটি কি?

 (What is information technology? )

(ইংরেজি:  Information and communications technology  (ICT) সাধারনভাবে তথ্য প্রযুক্তির সমার্থক শব্দ হিসাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এক ধরনের একীভূত ব্যবস্থা। তথ্যপ্রযুক্তি দ্বারা তথ্যকে গ্রহন, সংরক্ষন প্রকৃয়াকরন ও ফলাফল প্রদান ইত্যাদি কাজ করা হয়। অপরদিকে যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্বারা প্রকৃয়াকরনের ফলে প্রাপ্ত ফলাফল বিতরন, একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরন, সঞ্চালন ইত্যাদি কাজ করা হয়। অতএব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে যে কোন প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষন, প্রকৃয়াকরন, সঞ্চালন এবং বিচ্ছুরনে ব্যবহৃত সকল ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তিকে বুঝায়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি

‘আইসিটি’ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮০ সালের দিকে। কিন্তু শব্দটির জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৯৯৭ সাল থেকে। ষ্টিভেনসন ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই শব্দটি উল্লেখ করেন, যা পরবর্তীতে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের নতুন জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা হয় এবং পরবর্তীতে সমগ্র পৃথিবীতে ইহার ব্যবহার শুরু হয়।

ইউনেস্কো কতৃক প্রকাশিত ÔICT in Education Programme’  শীর্ষক বইয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে নি¤œরূপে উল্লেখ করা হয়েছে –

The term “information and communication technologies” (ICT) refers to forms of technology that are used to transmit, process, store, create, display, share or exchange information by electronic means.

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এক ধরনের একীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা। টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও তৎসম্পর্কিত সফটওয়ার, মিডলওয়্যার তথ্য সংরক্ষণ, অডিও-ভিডিও সিষ্টেম ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের ব্যবস্থা যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী খুব সহজে তথ্য গ্রহণ, সংরক্ষন, সঞ্চালন বা যে কোন স্থানে প্রেরন ও বিশ্লেষন  ইত্যাদি করতে পারে।



তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সমূহ

          

ইন্টারনেট

পরস্পর সংযোগকৃত কম্পিউটারের গেøাবাল নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলা হয়। ইন্টারনেট হচ্ছে বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কম্পিউটারের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক বা যোগাযোগ ব্যবস্থা। ১৯৯৫ সালের ২৪ শে অক্টোবর FNC ইন্টারনেটের সদস্যদের সর্বসন্মতি ক্রমে ইন্টারনেটের সংজ্ঞা প্রদান করেন। সংজ্ঞাটি নি¤œরূপ :

১। ইন্টারনেট প্রটোকল ( IP) এর উপর ভিত্তি করে কোন একক ঠিকানার মাধ্যমে গেøাবালি সংযোগকৃত হতে হবে।

২। ট্রান্সমিশন প্রটোকল (TCP)  এবং ইন্টারনেট প্রটোকল ( IP) ব্যবহার করে তথ্যের আদান প্রদান করা যাবে।

৩। ব্যাক্তিগতভাবে কিংবা সামগ্রিক অ্যাক্্েরস (Access)  করা যাবে। 

ইন্টারনেট আজ সারা বিশে^র এক তথ্য প্রবাহের এক অবাধ বিরামহীন বিশাল উৎস। তথ্যের এই মহা সমুদ্রে বিচরনকারী মুলত: সার্ভার (Server) থেকে তথ্য আহরন করেন। কোন এলাকা বা শহর এলাকা জুড়ে সার্ভার কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেন। এইরূপে সৃষ্ট নেটওয়ার্কই হলো ইন্টারনেটের প্রানকেন্দ্র। ক্ষুদ্রাকৃতির এই নেটওয়ার্কগুলো আবার যে বিশাল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হয়ে নিজেদের ভিতর তথ্য আদান প্রদান করে, সেই বিশাল নেটওয়ার্ককে বলা হয় ইন্টারনেট।

ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত নেটওয়ার্কের সংখ্যা বহু লক্ষ এবং সংযুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা প্রায় শত কোটিরও বেশি। আরপানেট দিয়ে ইন্টারনেটের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি গবেষনা প্রকল্পের  আওয়াতায় দেশের চারটি বিশ^বিদ্যালয়কে পরীক্ষামুলক কম্পিউটারগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট(ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। এতে প্রাথমিকভাবে যুক্ত ছিল। ইন্টারনেট ১৯৮৯ সালে আইএসপি দ্বারা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯০ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৯০ এর পরবর্তি সময়ের দিকে পশ্চিমাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হতে থাকে।

 বিশে^ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নি¤েœ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি তালিকা দেওয়া

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মে ২০১৮ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮৫.৯১৮ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। 


কম্পিউটার

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক অভূতপূর্ব নিদর্শন হলো কম্পিউটার (Computer)। এটি একটি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যা নিজস্ব স্মৃতি ভান্ডারে সুনির্দ্দিষ্ট এক বা একাধিক কাজের নির্দেশাবলী সংরক্ষণ করে রাখে। ব্যবহারকারী ডেটা বা উপাত্ত সরবরাহ করলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কম্পিউটার প্রকৃয়াকরন (প্রসেসিং) করে কাজের ফলাফল প্রদান করে।

কম্পিউটার (Computer)  শব্দটি গ্রিক কম্পিউট (Compute)  শব্দ থেকে এসেছে। (Compute) শব্দের অর্থ হিসাব বা গননা করা। আর কম্পিউটার (Computer)  শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্ত এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রকৃয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষন ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রæত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গনিত ও কম্পিউটারের ব্যপক প্রভাব। চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে।

কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে: কম্পিউটার নি¤œরিখিত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। যথা- 

১। সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারী কতৃক তৈরি নির্দেশের সেট বা প্রোগ্রাম কম্পিউটার মেমরিতে সংরক্ষন করে।

২। কীবোর্ড , মাউস, জয়ষ্টিক, ডিস্ক ইত্যাদি ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটার ডেটা গ্রহণ করে ও প্রযোজনে সংরক্ষণ করে।

৩। ডেটা প্রসেস করে অর্থাৎ ব্যবহারকারীর নির্দেশে কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্বাহ করে।

৪। মনিটর, প্রিন্টার , ডিস্ক ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ ও ভবিষতে এই ফলাফল ব্যবহারের জন্য সংরক্ষন করে।

কম্পিউটারের ব্যবহার: কম্পিউটারের রয়েছে প্রচুর ব্যবহার। ঘরের কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এর অপরিসিম ব্যবহার রয়েছে। সর্বোপরি যোগাযোগ ক্ষেত্রে এটি এনেছে অনন্য বিপ্লব। চিকিৎসা ও মানব কল্যানে এটি এক অনন্য সঙ্গী। মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রেনিতে পাঠদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে। এক কথায় কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা প্রায় সকল ধরনের কাজ করতে সক্ষম।


















Related term: